রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১১:২৯ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরগুনার বেতাগী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপে¬ক্সের হিসাবরক্ষক মো. রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে দুর্নীতির ও নানা অনিয়মের অভিযোগ ওঠেছে। এতে হাসপাতালের কর্মচারীরাও ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেছেন। এরই প্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার (২০ জুন) সকাল ১১টায় বরগুনা-২ আসনের সংসদ সদস্য শওকত হাচানুর রহমান রিমন হাসপাতাল পরিদর্শনকালে এসব কর্মকাণ্ডে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
হাসপাতালের ভুক্তভোগী কর্মচারীরা জানান, ২০০৯ সালে মো. রফিকুল ইসলাম বেতাগী হাসপাতালের হিসাবরক্ষক কাম প্রধান সহকারী হিসেবে যোগদান করেন। এরপর থেকে তিনি নানা ধরনের দুর্নীতি ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন।
কর্মচারীদের প্রতি তার দুর্ব্যবহার এবং তাদের নামে আসা কাগজপত্র গোপন করে হয়রানি করা এখন নিত্য-নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্বাস্থ্য পরিদর্শক আব্দুর রশীদ এসব কাজের প্রতিবাদ করায় তাকে বাবুগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপে¬ক্সে বদলি করা হয়। রফিকুল ইসলাম বেতাগী উপজেলার স্থানীয় লোক হওয়ার কারণে এসব দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ার সুযোগ পান বলে জানান কর্মচারীরা। এনসিডি প্রশিক্ষণ ও কমিউনিটি ক্লিনিকের অনুকূলে বরাদ্দ হওয়া মাতৃদুগ্ধ দিবসের টাকা আত্মসাতের কারণে ২০১৭ সালে প্রশাসনিকভাবে তাকে বদলি করা হয় ভোলা জেলায়। কিন্তু আদালতের আশ্রয় নিয়ে ৬ মাসের জন্য বদলি স্থগিত করে এখনো বহাল তবিয়াতে রয়েছেন এ উপজেলায়।
হাসপাতালের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের যোগদান ও বদলির ছাড়পত্র নেওয়ার জন্য তাকে ঘুষ দিতে হয়। নানা অজুহাত দেখিয়ে কর্মচারীদের বেতন থেকে প্রতিমাসে তিনি আর্থিক সুবিধা নিয়ে থাকেন। শুধু তাই নয়, হাসপাতালের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিনোদনের ছুটি মঞ্জুর ও অর্থছাড় করাতে তাকে বরাদ্দ করা টাকার অর্ধেকটাই দিতে হয়।
এভাবে কর্মচারীরা নির্যাতিত হয়ে আসলেও তারা ভয়ে মুখ খুলতে নারাজ। এছাড়া হাসপাতালের সরকারি কোয়াটারে দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা তৃতীয় শ্রেণি, তৃতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা চতুর্থ শ্রেণির বিভিন্ন কর্মচারীদের নামে বরাদ্দ দেখিয়ে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে তাদের কাছ থেকে প্রতিমাসে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। প্রতি জুন মাসে অফিসের আনুসঙ্গিক খরচের ভুয়া বিল ভাউচার তৈরি করে ও হাসপাতালের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে ঠিকাদারের সাথে যোগসাজসে ঠিকমতো কাজ না করে টাকা আত্মসাত করারও অভিযোগ করেছেন ওই সব ভুক্তভোগী কর্মচারীরা।
ইমাজেন্সি সহাকারী মো. জাহিদ হোসেনের কাছ থেকে হাসপাতালের অফিস কক্ষ ভাড়া বাবদ প্রতিমাসে এক হাজার টাকা আদায় করলেও সরকারি খাতে তা জমা না দিয়ে নিজের পকেট ভর্তি করছেন। হাসপাতালের অফিস সহায়ক মো. শহীদুল ইসলাম চলতি বছরের ফ্রেরুয়ারি মাসে যোগদানের পর থেকে হিসাবরক্ষককে ম্যানেজ করে মাসে ২ থেকে ৩ দিন অফিস করে যথারীতি বেতন তুলছেন। একই অভিযোগ প্রধান সহকারী আসাদুজ্জামান নাসিরের বিরুদ্ধেও।
গত ৭ এপ্রিল স্বাস্থ্য দিবস পালন না করে ভুয়া বিল ভাউচার দাখিল করে টাকা উত্তোলন, কর্মচারীদের বিভিন্ন দিবস পালন না করে এবং প্রশিক্ষণে নাম অন্তভুক্ত করে টাকা আদায়, ২০১৭ সালে হোমিওপ্যাথিক হাসপাতাল কল্যাণ সহায়তা ফান্ড এবং ফুলের বাগান করার ৪ লাখ টাকা হতে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা ব্যয় করে নামে মাত্র বাগান করে বাকি টাকা আত্মসাত করে। এই অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে ঢাকা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও বরিশাল স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালকের নিকট ২০১৮ সালে বেশকিছু কর্মচারী লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এ প্রেক্ষিতে ঢাকা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে বাকেরগঞ্জের উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মনিরুজ্জামানকে তদন্ত কমিটির প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
তিনি তদন্ত সাপেক্ষে এর সত্যতা পেয়ে ঢাকা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের শৃঙ্খলা শাখায় প্রতিবেদন দাখিল করেন। এরপর আর সেই তদন্ত প্রতিবেদন আলোর মুখ দেখেনি। এসব অভিযোগ অস্বীকার করে মো. রফিকুল ইসলাম জানান, আমার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ সত্য নয়, এসব অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মো. শাকিল তানভীর জানান, হিসাবরক্ষকের বিরুদ্ধে অবশ্যই বিভাগীয় শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। তার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।
Leave a Reply